অনলাইনঃ পরীক্ষা শেষে মায়ের হাত ধরে বাসায় ফিরছিল স্কুলছাত্রী তাসনিম আলম তৃষা (১২)। কিন্তু মাকে আঁকড়ে ধরা সে হাত বাঁচাতে পারেনি তৃষাকে। দ্রুতগামী একটি বাস পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে চাকায় পিষ্ট করে যায় তাকে। চোখের সামনে রক্তাক্ত মেয়েকে ছটফট করতে দেখে আর্তনাদে ফেটে পড়েন মা। মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে রাজধানীর মিরপুরের কাজীপাড়ায় লাইফ এইড হাসপাতালের সামনে ঘটে মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা। ১২ বছর বয়সী তৃষা মিরপুর আইডিয়াল গার্লস স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ত। ঘটনার পর উত্তেজিত পথচারীরা ঘাতক বাসটিতে ভাংচুরের একপর্যায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় বেশ কয়েকটি যানবাহনও ভাংচুর করা হয়। একপর্যায়ে ব্যস্ততম রোকেয়া সরণিতে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে রাস্তার দু’পাশেই সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজটের। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ বাসটির চালক আবদুর রহিম বাচ্চুকে আটক করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, স্কুল শেষে মায়ের হাত ধরে বাসায় ফেরার পথে রাজধানীর কাজীপাড়া লাইফ এইড হাসপাতালের সামনে ‘তেঁতুলিয়া পরিবহন’ নামের একটি বাস পেছন থেকে ছাত্রীটিকে ধাক্কা দেয়। আবদুল্লাপুর থেকে মোহাম্মদপুর রুটের বাসটি মিরপুর-১০ হয়ে আগারগাঁওয়ের দিকে যাচ্ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় বাসের ধাক্কায় ওই স্কুলছাত্রী ছিটকে চাকার নিচে পড়ে। এ সময় ছাত্রীটির মা নিজেই ছুটে গিয়ে মেয়েকে চাকার নিচ থেকে বের করে আনার চেষ্টা করেন। তার আর্তনাদ শুনে পথচারীরা মেয়েটিকে চাকার নিচ থেকে বের করে পার্শ্ববর্তী হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ছাত্রীকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় হাসপাতালে তৃষার মায়ের আহাজারিতে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
কাফরুল থানার উপ-পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে জানান, দুর্ঘটনার পরপরই বিক্ষুব্ধ লোকজন ওই বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নেভায়। এ সময় আরও কয়েকটি যানবাহনে ভাংচুর চালানো হলে ব্যস্ততম ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।
জানা গেছে, তাসনিম আলম তৃষার বাবার নাম খোরশেদ আলম। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে তৃষা বড়। ঢাকায় ৬৩১/৫ পশ্চিম কাজীপাড়ায় তাদের বাসা। তার বাবা টিএনসিসি নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে চাকরি করেন। তাদের গ্রামের বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জে।
ঘটনার পর বাসটির চালক আবদুর রহিম বাচ্চুকে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আটক করা গেলেও হেলপার পালিয়ে গেছে বলে জানান এসআই রফিকুল। এ ঘটনায় কাফরুল থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। মামলা নম্বর-৯। তবে অনুমতি নিয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়াই স্কুলছাত্রীর লাশ নিয়ে গেছে পরিবার।